Breaking News

[ হবিগঞ্জে ঘরের ভেতরে মা মেয়েকে গলা কেটে হত্যা




হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দ্বিগম্বর বাজারের একটি বাসা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে অঞ্জলি দাস (৩৫) ও পূজা দাস (৮) নামে মা-মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, এটি হত্যাকাণ্ড। ঘটনাস্থলের পাশ থেকে আমীর আলী নামে এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া গেছে। তিনি একই ভবনের বাসিন্দা। পুলিশ আমীর আলীকে আটক করলেও অসুস্থ থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমীর আলীর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাহুবল উপজেলার লামাপুটিজুরি গ্রামের সন্দ্বীপ দাস তার স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে উপজেলার দ্বিগম্বর বাজারের পাশে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। তিনি পেশায় কাঁচামাল ব্যবসায়ী। সন্দ্বীপ বুধবার রাতে ব্যবসার কাজে সুনামগঞ্জে ছিলেন। গতকাল ভোরে বাসায় এসে দেখেন, বাসার দরজা খোলা। মেঝেতে পড়ে আছে স্ত্রী ও মেয়ের গলাকাটা লাশ। তার চিত্কার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। খবর পেয়ে বাহুবল থানার পুলিশ ও বাহুবল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী সকালে ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করে হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। সন্দ্বীপ দাস জানিয়েছেন, বুধবার রাত ৩টার দিকে তার প্রতিবেশী আমীর আলী তাকে ফোন করে বলেন যে, তার (সন্দ্বীপ) বাসায় চুরি হয়েছে। চোরের দল তার বাসা থেকে সেলাই মেশিন নিয়ে গেছে। তিনি আহত হয়েছেন। এদিকে রাতেই অঞ্জলি দাসের সঙ্গে সন্দ্ব্বীপের বেশ কয়েক বার কথা হয়েছে। তখন অঞ্জলি সন্দ্বীপকে বলেন, তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো, আমার খুব ভয় লাগছে।

পুটিজুরী ইউপি চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন তারা মিয়া বলেন, ঘটনায় আহত আমীর আলী সন্দ্বীপকে রাতে ফোন করে তার বাসায় চুরির ঘটনা জানায়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে আমীর আলী কীভাবে জানলেন তারা বাসায় চুরি হয়েছে। সকালে যখন সন্দ্বীপের চিত্কারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন তখন ঐ ভবনের বাইরে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিলেন আমীর। লোকজন তাকে উদ্ধার করে বাহুবল থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। ঐ ভবনের তৃতীয় তলার জানালার সঙ্গে একটি রশিও ঝুলে থাকতে দেখেছেন অনেকে। তাদের ধারণা, রশি বেয়ে নামতে গিয়ে আমীর আলী পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। তখন থেকেই তিনি অচেতন হয়ে পড়ে ছিলেন।

সন্দ্বীপ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি যে ভবনের তৃতীয় তলায় থাকেন ঐ ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকেন আমীর আলী। তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। বুধবার সকালে সন্দ্ব্বীপের বাসায় গিয়ে তার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ধার চান আমীর। এ সময় সন্দ্বীপের কাছে দেড় লাখ টাকা ছিল। টাকার বান্ডিল বের করে সেখান থেকে আমীর আলীকে ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা বাসায় রেখে সন্দ্বীপ সুনামগঞ্জ চলে যান।

পুলিশের ধারণা, এই টাকার জন্য আমীর আলী এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন। বাহুবলের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন, ক্লু উদ্ঘাটনে আমরা কাজ করছি। আশা করছি দুয়েক দিনের মধ্যেই খুনের ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে। আমীর আলীকেই তারা সন্দেহের চোখে দেখেন।

স্থানীয় দ্বিগম্বর বাজারের ব্যবসায়ী এফ আর হারিছ বলেন, দীর্ঘদিন যাবত্ ভাড়া বাসায় থেকে সন্দ্ব্বীপ ব্যবসা করে আসছেন। তিনি বলেন, আমার জানা মতে, তার সঙ্গে কারো কোনো শত্রুতা নেই। আহত আমীর আলীকেই আমরা সন্দেহ করছি।

বাহুবল থানার ওসি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এটি হত্যাকাণ্ড। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, কারা এর সঙ্গে জড়িত, পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমরা আশা করছি, দ্রুততম সময়ে হত্যাকাণ্ডের পুরো রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারব। হত্যাকারীকে আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। শিগিগরই বিষয়টা আমরা সাংবাদিকদের জানাব।





 

কোন মন্তব্য নেই

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷