[ কেন শাখাঁ সিদুঁর হিন্দু নারীর অহংকার !
সনাতন নিউজ২৪.<> ঢাকা বাংলাদেশ
মঙ্গলবার „১৬ মার্চ ২০২১„
হিন্দু নারীরা অলংকার শাখাঁ সিদুঁরই তার অহংকার ! শাঁখা সিঁদুর ও হিন্দু ধর্মের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শাঁখা সিঁদুর আমাদের হিন্দু বিবাহিত নারীরা পরে আসছে অনেক আগে থেকে । তবে বর্তমানে এগুলা না পরা অনেকটা আধুনিকতার স্বরুপ হয়ে দাড়িয়েছে কারো কারো কাছে। তাই আসুন আজ আমরা দেখে নি কেন শাঁখা সিঁদুর আমাদের হিন্দু বিবাহিত নারীরা পরে আসছে !
শাঁখা, সিঁদুর ও লোহা ব্যবহারের তিনটি কারণ আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক।
১/আধ্যাত্মিক কারণ : শাঁখার সাদা রং- সত্য, সিঁদুরের লাল রং – রজঃ এবং লোহার কাল রং- তম গুণের প্রতীক। সংসারী লোকেরা তিনটি গুণের অধীন হয়ে সংসার ধর্ম পালন করে।
সামাজিক কারণঃ তিনটি জিনিস পরিধান করলে প্রথম দৃষ্টিতেই জানিয়ে দেয় ঐ রমণী একজন পুরুষের অভিভাবকত্বে আছেন। সে কারণেই অন্য পুরুষের লোভাতুর লোলুপ দৃষ্টি প্রতিহত হয়। স্বামীর মঙ্গল চিহ্ন তো অবশ্যই।
বৈজ্ঞানিক কারণঃ রক্তের ৩টি উপাদান শাঁখায় ক্যালসিয়াম, সিঁদুরে মার্কারি বা পারদ এবং লোহায় আয়রণ আছে। রক্তের ৩টি উপাদান মায়েদের মাসিক রজঃস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। তিনটি জিনিস নিয়মিত পরিধানে রক্তের সে ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। আর্য ঋষিগণ সনাতন ধর্মের প্রতিটি আচার অনুষ্ঠানেই বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে আচার বা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছেন। লক্ষ্য করবেন সিঁদুর দেয়ার সময় মায়েরা নিচের দিকে নয়, ঊর্ধ্বায়ণ করে। কেন? সিঁদুর ঊর্ধ্বায়ণের মাধ্যমে রমণীগণ নিয়ত তার স্বামীর আয়ু বৃদ্ধির প্রার্থনা করে। যে স্বামী আজীবন আপনার পাশে ছায়ার মত থাকার শপথ নিয়েছে তার মঙ্গলের জন্য এতটূকু কষ্ট করতে পারবেন না?
সৌন্দর্যের বিচারে শ্বেত-শুভ্র শাঁখা আর লাল টকটকে সিঁদুরের মত এত অর্থপূর্ণ কসমেটিক্স বর্তমান বাজারে ২য় টি কি আছে? আমার এই কথার পর হয়তো নয় শিওর ভাবছেন, তাহলে ছেলেদের এমন কিছু নেই কেন? তাইতো?-
স্বভাবতই মেয়েরা সাজুগুজু পছন্দ করে। তাই মেয়েদের এই দিক টা মাথায় রেখেই শাঁখা সিঁদুরের মত এত পবিত্র উপকরনের কথা চিন্তা করা হয়েছে । সেদিক থেকে ছেলেরা অনেক দুর্ভাগ্যবান যে তাদের এমন কিছু নেই যা বিয়ের স্বীকৃতি স্বরূপ স্ত্রীরা তাদের দিবেন এবং সবসময় সাথে রাখবেন। তবে হ্যা, বস্তুত কিছু না থাকলেও অদৃশ্য কিছু ১টা অবশ্যই আছে । সেটা আপনার ভালবাসার বন্ধন।
২/ সামাজিক কারণ : তিনটি জিনিস পরিধান করলে প্রথম দৃষ্টিতেই জানিয়ে দেয় ঐ রমণী একজন পুরুষের অভিভাবকত্বে আছেন। সে কারণেই অন্য পুরুষের লোভাতুর, লোলুপ দৃষ্টি প্রতিহত হয়। স্বামীর মঙ্গল চিহ্ন তো অবশ্যই।
৩/ বৈজ্ঞানিক কারণ : রক্তের ৩টি উপাদান শাঁখায় ক্যালসিয়াম, সিঁদুরে মার্কারি বা পারদ এবং লোহায় আয়রণ আছে। রক্তের ৩টি উপাদান মায়েদের মাসিক রজঃস্রাবের সাথে বের হয়ে যায়। তিনটি জিনিস নিয়মিত পরিধানে রক্তের সে ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
আর্য ঋষিগণ সনাতন ধর্মের প্রতিটি আচার অনুষ্ঠানেই বৈজ্ঞানিক প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে আচার বা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছেন।
সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে তৈরি এবং হিন্দু ধর্মীয় বৈবাহিক রীতির একটি অলঙ্কার। হাতের বালার মতো এই অলঙ্কার বিবাহিত হিন্দু মহিলারা ব্যবহার করেন। বিবাহের মন্ত্র পড়ার সময় কনের পিতা কনের হাতে দুটি শাঁখা দিয়ে থাকেন, স্বামীও স্ত্রীর জন্য শাঁখা কিনে আনেন। হিন্দু রমণীরা তাঁদের স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা যত্ন সহকারে ব্যবহার করেন। কাটা বা ভাঙ্গা শাঁখা ব্যবহার করা অমঙ্গল ও শঙ্কাজনক মানসিকতার সৃষ্টি করে। এ শাঁখা স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতীক। সাধারণ শঙ্খে ডান থেকে বামে গোলাকার মোড় দেখা যায়। যখন কোনো শঙ্খে বিপরীতমুখী মোড় দেখা যায়, সে শঙ্খকে অতি মূল্যবান বলে ধরা হয় ও সেটিকে বলা হয় ‘দক্ষিণবার্তা’ বা সৌভাগ্যবান শঙ্খ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ শঙ্খকে পবিত্র শঙ্খ বলা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতা বিষ্ণু এ ধরনের শঙ্খ হাতে ধারণ করে থাকেন। ওলন্দাজ জাতির কাছেও শঙ্খ পবিত্র বলে চিহ্নিত। আকৃতি অনুযায়ী শঙ্খগুলিকে কয়েক নামে অভিহিত করা হয়, যেমন: পদ্ম শঙ্খ (যা বিষ্ণু ধারণ করেন), বাদ্য শঙ্খ (যা মন্দিরে ফুঁ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়), জল শঙ্খ (পূজা-অর্চনায় ব্যবহূত হয়), গোমুখ শঙ্খ (ধর্মীয় কাজে ব্যবহার-অযোগ্য), সাধারণ শঙ্খ ইত্যাদি।
সিঁদুর (বা সিন্দূর)একপ্রকার রঞ্জক পদার্থ। এটি সাধারণত মেয়েদের সিঁথিতে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত অবধি প্রসারিত টীকা বা কপালে টিপের আকারে ব্যবহৃত হয়। হিন্দুধর্মে সিঁদুর বিবাহিতা নারীর প্রতীক। অবিবাহিত মেয়েরা সিঁথিতে সিঁদুর পরে না, কপালে সিঁদুরের টিপ পরে। বিধবাদের সিঁদুর ব্যবহার শাস্ত্রমতে নিষিদ্ধ। হিন্দুদের পূজানুষ্ঠানের সময়ও সিঁদুর ব্যবহৃত হয়।
সিঁদুরের ইতিহাস অতি প্রাচীন বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু ধর্মমতে এটি স্বামীর দীর্ঘজীবন বয়ে আনে বলে বিবাহিত হিন্দু নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করেন। এর রঙ লাল, কারণ এটি শক্তি ও ভালোবাসার প্রতীক। হিন্দু বিবাহের সময়ে একজন নারীর প্রথম কপালে সিঁদুর দিয়ে চিহ্ন আঁকা হয় ।
সিঁদুরের ঐতিহ্য:
বিবাহের সুন্দরতম মুহূর্ত হলো ,সিঁদুরদান । বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁথিতে সিঁদুর পড়া আনুমানিক ৫০০০ বছর প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। প্রাচীন রামায়ণে মাতা সীতা এবং মহাভারতে দ্রৌপদী সিঁথিতে সিঁদুর ব্যাবহারের স্পস্ট প্রমাণ আছে। রামায়ণে শ্রীরাম যখন মাতা সীতা কে বিবাহ করেন তখন তিনি মাতা সীতার সিঁথিতে সিঁদুর দান করেছিলেন, একই প্রমাণ আছে হরিবংশ পুরাণে যখন শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীদেবী কে বিবাহ করেন তখন তিনিও রুক্কিনীদেবী সিঁথিতে সিঁদুর দান করেছিলেন, এই পরম্পরাই এখনও অবদি হিন্দু বিবাহতে চলে আসছে। যেখানে স্বামী তার স্ত্রী কে সিঁথিতে সিঁদুর দান করে স্ত্রী হিসাবে তাকে গ্রহণ করে।
এছাড়া বেশকিছু ঐতিহাসিক এটা স্বীকার করে থাকেন প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতেও নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করতো। সিঁদুরের গুরুত্বের সবচেয়ে ভালো ব্যাখা আছে ‘ললিতা সহ নামে’। এটা ব্রহ্মান্ডপুরাণের অংশ বিশেষ, দেবী ললিতা যিনি মা দূর্গা বা মা শক্তির অপর নাম তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে ললিতাদেবীর সিঁথির সিঁদুর কে শ্রীলক্ষীর প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ্যাৎ একজন বিবাহিত নারীকে এই সিঁদুরই তাকে শ্রীলক্ষীর স্বরূপ হিসাবে সমাজের সামনে তুলে ধরে। হিন্দু সংস্কারে নারীকে লক্ষী হিসাবে গণ্য হয় এবং বিবাহিত নারী কে শ্রী+লক্ষী=শ্রীলক্ষী হিসাবে গণ্য করা হয় কারণ একজন বিবাহিত নারী সংসারের ‘শ্রী’ এর কারক, ‘শ্রী’ বিনা সেই সংসার পূর্ণতা পায় না।
আশা করি সবাই পড়ে নেবেন সাধ্বী নারীর সিঁদুর ধারণ মন্ত্র । সিথীতে ওঁ কৃষ্ণায় নমঃ কপালে ওঁ কেশবায় নমঃ কণ্ঠে ওঁ গোবিন্দায় নমঃ শঙ্খে ওঁ মধুসুদনায় নমঃ বস্ত্রে ওঁ মাধবায় নমঃ শিরোভূষণ সিন্দুরং ভর্ত্তুরায়ু বিবর্দ্ধনং । সর্বরত্নাকরং দিব্যং সিন্দুরং প্রতিগৃহ্যতাম্ ।।
জগৎগুরু আদি শঙ্করাচার্য তার ‘সৌন্দর্যলহরী’ গ্রন্থে সিঁদুর কে মা শক্তির স্বরূপ অর্থ্যাৎ মা দূর্গার প্রতিক অর্থ্যাৎ যিনি দূর্গতিহারিণী তার প্রতীক ও মঙ্গলরুপী সূর্য হিসাবে ব্যাখা দিয়েছেন। সিঁথিতে সিঁদুর ও কপালের সিঁন্দুরের টিপ শ্রী চক্রের স্বরূপ।
বাহ্যিক সামাজিক গুনাবলীঃ- কোনো শাঁখা সিদুঁর পরিহিত মহিলা দেখলে সবাই বুঝে যে, সে বিবাহিত, সেই ক্ষেত্রে তার সাথে সুশ্রী আচরণ করা হয়। নারীদেরও শাঁখা সিদুঁরের প্রতি আলাদা স্প্রহা থাকে, কেন না এটি তার জীবনের মিলবন্ধনে প্রতি মুহুতে জ্ঞাত করে। স্বামী হিন্দু মেয়েদের কাছে তাদের দেবতা সরুপ । তাই স্বামীর দেয়া প্রথম এ শাখাঁ সিঁদুরই তার অহংকার ।একজন নারী তার শাখাঁ সিদুঁরের মাধ্যমেএবং বিবাহের মন্ত্রসহ সকল কাজের সমাপ্তী মাধ্যমেই তার স্বামীর সাথে আপন হতে থাকে ।একটু একটু করে সকল আচার বিধি শেষ হওয়ার মাধ্যমে অটুট হতে থাকে তাদের যুগযুগান্তরের বন্ধন ও।
একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন :- সিঁদুর দেয়ার সময় মায়েরা নিচের দিকে নয়, ঊর্ধ্বায়ণ করে। কেন? সিঁদুর ঊর্ধ্বায়ণের মাধ্যমে রমণীগণ নিয়ত তার স্বামীর আয়ু বৃদ্ধির প্রার্থনা করে। শুভ বিজয়াতে বা বিভিন্ন পূজা পার্বণে মায়ের দেবী দুর্গাকে সিঁদুর ছোঁয়ান বা একে অন্যে সিঁদুর পড়ান। কেন? দুর্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন সিঁথির সিঁদুর যেন অক্ষয় থাকে। একে অন্যকে পরিয়ে দেন সে বাসনাতেই।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷