দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধারে উত্তাল নারায়ণগঞ্জ। খোকন সাহা ও প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদ।
সনাতন নিউজ২৪.<> ঢাকা বাংলাদেশ
রবিবার , ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১,
প্রদীপ দাস এবং খোকন সাহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে হবে মেয়র আইভির পরিবারকে।
নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই শ বছরের পুরোনো দেওভোগস্থ লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি জিউস পুকুর দখল করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি কথা বলায় হিন্দু লাইভস মেটার’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনাকারী কানাডা প্রবাসী প্রদীপ দাসকে ১ নং আসামি আর নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে ২নং আসামি করে উনাদের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। আগামীকাল ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানীর দিন ধার্য করা হয়েছে। এই ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে আসা মেয়র আইভির বক্তব্য হচ্ছে, জিউস পুকুরের সাথে মেয়র আইভি কিংবা তার বাবার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাঁর আত্মীয় স্বজনরা এই সম্পত্তি ৪০ বছর আগে ক্রয় করেছে। এটা নিয়ে আদালতে মামলাও চলছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি কি ক্রয় বিক্রয় করা যায়??? আর আদালতে যদি মামলা চলমান থাকে তবে কেন বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা আর বস্তা ফেলে সেই জিউস পুকুরটি ভরাট করার অপচেষ্টা চলছে??? মেয়র আইভি এবং উনার পরিবার পরিস্কারভাবে সত্য আড়াল করার অপচেষ্টা করছেন। সত্যটা তবে কি.?
নারায়ণগঞ্জ নগরী স্থাপনের সময়কালে শ্রী ভিকন লাল ঠাকুর শহরের দেওভোগ আখড়া এলাকায় হিন্দুদের উপাস্য দেবতা লক্ষ্মী-নারায়ণের নামে “শ্রী শ্রী রাজা লক্ষ্মী-নারায়ণ জিউর বিগ্রহ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। শত শত বছর ধরে এই মন্দিরটি নারায়ণগঞ্জের লাখো লাখো সনাতন সম্প্রদায়ের জন্য একটি পবিত্রতা ও শুদ্ধতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বর্গবাসী ভিকন লাল পান্ডে মন্দিরটির পাশেই পূজা অর্চনা ও আশপাশের অধিবাসীদের সুবিধার্থে ৩৬৭ শতাংশের একটি পুকুর খনন করান যা স্থাানীয়দের কাছে জিউস পুকুর নামে পরিচিত। কয়েকশো বছর ধরে এই পুকুরটিতে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন পূজা অর্চনা করছেন এমনকি স্থানীয় মুসলমানরাও তাদের প্রাত্যহিক কাজে এই পুকুরটি ব্যবহার করে থাকেন।
ভূমি জরিপের সিএস (ব্রিটিশ) পর্চায় এই বিশাল সম্পত্তিটি (মন্দির ও পুকুরসহ মোট আয়তন প্রায় ৪ একর) দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবেই রেকর্ডভুক্ত হয়। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর এই বিশাল দেবোত্তর সম্পত্তিটি, বিশেষ করে পুকুরটি দখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে একটি স্থানীয় চক্র। জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকেই এই দেবোত্তর সম্পত্তি গ্রাস করার জন্য মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর পরিবার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। যেসকল নকল দলিল করে এই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে সেইসব দলিলেই মেয়র আইভীর মা, ২ ভাইসহ তারই আত্মীয় স্বজনের নাম রয়েছে। ইতিপূর্বে এই পুকুর ভরাটেরও চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু নারায়ণগঞ্জের হিন্দু মুসলমান সর্বস্তরের ধর্ম বর্ণ শ্রেনী পেশার মানুষের বাধার মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। উপায়ন্ত না পেয়ে মন্দিরের পক্ষে আদালতে মামলা দায়ের করা হলেও মামলার বাদীসহ সংশ্লিষ্টদের মেয়র আইভী নিজে ডেকে নিয়ে এবং লোক মারফত ক্রমাগত হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এই দেবোত্তর সম্পত্তিটির বর্তমান মূল্য ১০০ কোটি টাকার উপরে হলেও একে ঘিরে লাখো লাখো সনাতন ধর্মালম্বীদের অনুভূতির কোনো মূল্য নির্ধারণ করা যাবে না। শুধু হিন্দুদের ধর্মীয় স্থান হিসেবে নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের ইতিহার এবং ঐতিহ্যে জড়িয়ে আছে এই জিউস পুকুরকে ঘিরে। আর তাইতো, শুধু হিন্দুরা নয়, খোকন সাহা কিংবা প্রদীপ দাস দাদারা নয়, নারায়ণগঞ্জের হিন্দু মুসলমান সহ সর্বস্তরের জনগণ তথা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পেশাজীবি সংগঠনের নেতা কর্মীরাও এই জিউস পুকুর দখলের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রাম আর প্রতিবাদ সমাবেশ করে যাচ্ছেন। গতকালও সেই মন্দির সংলগ্ন জিউস পুকুরের সামনে ঐতিহাসিক অভূতপূর্ব সমাবেশ হয়েছে।
মেয়র আইভি, আপনি একজন জনপ্রতিনিধি, আপনার পরিবার আর আত্মীয় স্বজনকে মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটির মানুষ ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেনি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা অপরাধ হতে পারেনা। দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সেই অধিকার আছে। সত্য আড়াল করার জন্য খোকন সাহা আর প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছেন, অবিলম্বে সেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে, মন্দিরের দেবোত্তর সম্পত্তি দখলের অপচেষ্টা থেকে সরে আসতে হবে আপনাকে, নয়তো আমাদের এই সম্মিলিত প্রতিবাদ, প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে।।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷