লালমনিরহাটে নেতাদের চাপে বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বিপাকে অঞ্জলি
সনাতন নিউজ২৪.
লালমনিরহাটে নেতাদের চাপে বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বিপাকে অঞ্জলিঃআশ্রয় মন্দিরে
সমাজচ্যুতঅঞ্জলি একঘরে বন্দীঃদায় এড়াতে পারেনা সমাজ।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া সরকারের হাট সেনপাড়া এলাকার ঘটনা।ঘটনাটি বড়ই বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। সংখ্যালঘু এক পরিবারে দাম্পত্য জীবনের কলহে ৩০ বছরের সংসার জীবনে আগুন জ্বলছে।
স্ত্রী’র পরকীয়া সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে সংসারে কয়েক বছর ধরে বনিবনা নেই।পরকীয়া’র অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২১ মে স্ত্রী অঞ্জলিকে মারধর করেন তার স্বামী ব্রাহ্মণ ঠাকুর কার্তিক চক্রবর্তী।মারধর সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে ঘর ছাড়েন অঞ্জলি।এসময় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া তৃতীয় মেয়ে শিখা চক্রবর্তী’ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান তার মায়ের সাথে।নিরুপায় অসহায় অঞ্জলি ও তার যুবতী কন্যা আশ্রয় নেন সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় নামে বাড়ির পাশের মন্দিরও আশ্রমে।আরও দুই মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া দোলন, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া জয়া ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া সম্পদ নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়ে রুমি চক্রবর্তী’ মারা গেছে।বড় মেয়ে সুমী’র বিয়ে হয়েছে।সুমী’র ঘরে নাতী নাতনী’রও জন্ম হয়েছে।
৪৫ বছর বয়স্কা নারী অঞ্জলিকে জড়িয়ে এমন অভিযোগে লজ্জিত পরিবারটি।যারফলে
উপজেলার বড় বড় হিন্দু নেতাদের কাছে বিচার প্রার্থী হোন কার্তিক চক্রবর্তী।হিন্দু নেতারা খবর পেয়ে সেই আশ্রম মন্দিরে ও কার্তিক ঠাকুরের বাড়িতে ছুটে যান।
স্বামী -স্ত্রীকে এককরার উদ্যোগ নিয়ে কয়েক দফায় ব্যর্থ হয়ে হিন্দু নেতারা অঞ্জলিকে মাত্র দু’দিন সময় বেঁধে দিয়ে বলেন,আগামী দু’দিনের মধ্যে স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে হবে নয়তো স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হবে।চার মেয়ে এক ছেলে মিলে সুখের সংসারটি যেন নিমিষেই তছনছ হয়ে গেছে।অভিমানী অঞ্জলি চাপের মুখে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হোন। লালমনিরহাট আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স এর কাজটি করে দেন আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা এডভোকেট মধু।তিনিও হিন্দু বলে তাঁর কাছে পরামর্শ ও আইনী সাহায্য নেন অঞ্জলি। হিন্দু ধর্মে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার বিধান নেই বলে স্বামী ঠাকুর পুরোহিত ব্রাহ্মণ কার্তিক চক্রবর্তী’র দাবী।
ডিভোর্স দেয়ার পর থেকে সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় আশ্রমে দিন রাত এক রকম বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন অঞ্জলি ও সঙ্গে থাকা যুবতী মেয়ে শিখা।
আশপাশের পুরো হিন্দু সমাজ এক হয়েছেন,তাদেরকে এক ঘরে করেছেন।তাদের সাথে কথা বলা যাবেনা,কোন কিছু আদান- প্রদান করা যাবে না মর্মে হিন্দু নেতারা হুশিয়ারী উচ্চারণ করে গেছেন।মা ও মেয়ের জীবন বাঁচাতে মন্দিরের জমিদাতা মৃত হরিকান্ত সেনের ছেলে কমল সেন ও সরকারের হাট এলাকার মৃত খিয় নাথ রায়ের ছেলে মন্দির কমিটির সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায় সাহায্য করছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় ও আশ্রম মন্দির কমিটির সভাপতি,উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক,
জোংড়া মমিনপুর বাঁশ কাটা ১১৯ নং ছিটমহল হাই স্কুলের কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক,জোংড়া হিন্দু ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বিষ্ণু প্রসাদ রায় হচ্ছেন কার্তিক -দম্পতির সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ।
ঠাকুর কার্তিক পরিবারের অভিযোগ বারবার নিষেধ করার পরও বিষ্ণু প্রসাদ তার বাড়িতে আসেন।রাতবিরাতে অঞ্জলি’র সাথে গল্প করেন।
এতে প্রতিবেশীরা সমালোচনা করেন।পরকীয়া সন্দেহ করে প্রায় সময় স্বামী -স্ত্রী ঝগড়া হয়।
রহস্য কি তা উৎঘাটন করতে সরেজমিন এ প্রতিনিধি সৎসঙ্গ প্রার্থনালয়ে গেলে দেখা ও কথা হয় অঞ্জলি ও তার কন্যা শিখা চক্রবর্তী’র সাথে।
কীর্তনগান সুবক্তা অঞ্জলি চক্রবর্তী’র বক্তব্য বাকী জীবনটা পূজা প্রার্থনা করে বেঁচে থাকতে চাই। স্বামীর সংসারে অনেক নির্যাতন সয়েছি।আর না।
৩০ বছরের সংসার জীবনে প্রায়দিন অশান্তির সৃষ্টি। স্বামী ব্রাহ্মণ ঠাকুরের হাতে মারধর আর সহ্য হয়না।একদিন রড তালা দিয়েও বেদম মারপিট করা হয়।কোমরের নীচে ও উরুতে রক্তপাত হয়।তবু কাউকে বিচার দেননি অঞ্জলি।ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করার কথা।বাপের বাড়ি রংপুর দাসপাড়া।বাবা জগেশ্বর ভট্টাচার্য মা নিহার বালা পরলোক গমন করেছেন।
অঞ্জলি’র তিন ভাই আছেন।এক ভাই ধিমান ভট্টাচার্য রংপুর শহরের বড় একজন হিন্দু নেতা।স্বামীর নির্যাতনের কথা কখনও ভাইদের জানাননি কারণ বাবার উপদেশ ছিল স্বামীর বাড়ির কথা বাবার বাড়িতে বলতে নেই।এতে অমঙ্গল হয়।
বছর দশেক আগে বৃদ্ধ বাবার সামনে অঞ্জলিকে লাঠি দিয়ে মারধর নির্যাতন করেন স্বামী।সে দিনটার কথা ভুলতে পারেন না তিনি।সংসার জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।বাচ্চাগুলোর কারণে পাশের মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন।সংসার না করলেও স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার ইচ্ছা ছিল না তার।বাধ্য হয়ে দেন।
তাকে জড়িয়ে তার স্বামী মিথ্যা বদনাম ছড়িয়েছেন,এখবরটা ভাইয়ের কাছেও গেছে বলে বাবার বাড়িতে যাননি।তার সাথে বিষ্ণু প্রসাদের প্রেম বা পরকীয়া নেই বলে দাবী করেন।
কার্তিক -অঞ্জলি দম্পতি সমাজের দশজনের সহযোগীতা নিয়ে বছরখানেক আগে নিজের অর্থায়নে বাড়ির পাশে মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। সেই মন্দিরে কার্তিক ঠাকুর ৭৬ হাজার ৫ শ টাকা দান করেন।স্ত্রী অঞ্জলিও গরু বেচে ৪২ হাজার টাকা দান করেছেন।সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় নামে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করার পর শুরু হয় সাংসারিক কলহ।ইতোমধ্যে মন্দিরটির ছাদ ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে।এদিকে,ঠাকুরের সংসারে আগুন ধরেছে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎ সঙ্গ প্রার্থনালয় ও আশ্রমের নিয়মের কথা বলে জমিদাতা কমল সেনদের কাছ থেকে চালাকি করে মন্দিরের জমি নিজ নামে দলিল করে নেন মন্দির সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায়।
কেন,জমি নিজ নামে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে বিষ্ণু প্রসাদ রায় বলেন,কমল সেনরা সেচ্ছায় তার নামে মন্দিরের জমি দান করে দিয়েছেন।
প্রয়োজনে আরও দিবেন।প্রার্থনালয় ও আশ্রম করতে আরও জমি লাগবে।ইতোমধ্যে ৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করে ছাদ ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে।
কার্তিক ঠাকুর বলেন,বিষ্ণু একটা বাজে লোক।তার খপ্পরে পরেছে আমার স্ত্রী।
স্ত্রীকে অপহরণ করার অপরাধে স্বামী কার্তিক জুনের প্রথম সপ্তাহে পাটগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।এসআই মিন্টু চন্দ্র রায় ঘটনার তদন্তে গিয়ে আসামী বিষ্ণু প্রসাদ রায়,কমল চন্দ্র সেন,সতীষ চন্দ্র সেন,রাজেন্দ্র রায় সেন,রুপম রায় সেন কে জিজ্ঞাসাবাদের পর তেমন সত্যতা পাননি।
কার্তিকের স্ত্রী অঞ্জলি ও রংপুর রেডিও সেন্টারের রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মেয়ে শিখা অভিযোগটি নাকচ করে দেন।
এদিকে,মেয়ে শিখা কে মায়ের কাছ থেকে উদ্ধার করার জন্য লালমনিরহাট বিজ্ঞ আদালতে ১০০ ধারা একটি মামলা করেছেন বাবা কার্তিক।মেয়ে তার মায়ের কাছে থাকতে চাইলে তাকে তেজ্য ঘোষণা করবেন বাবা এমনটাই জানিয়েছেন মোবাইলে।
ঘটনাটি মীমাংসার জন্য অনেক চেস্টা করেছেন বলে জানান পাটগ্রাম থানার এস আই মিন্টু চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন,হিন্দু নেতারা বসে স্বামী -স্ত্রীকে এক করে দিলে থানা প্রশাসন সহযোগীতা করবে।এ ব্যাপারে পাটের ডাঙ্গা মন্দির নেতা বিনয়,নির্মল, বীরবল ও বাউরার দুলালসহ বেশ ক’জন ব্রাহ্মণের কারণে ডিভোর্স করা হয়েছে। উপজেলার ব্রাহ্মণ সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় হিসাবিয়া আলো বাবু একটু নরম হলে বিষয়টা মানবিক ভাবে বিচার করলে স্বামী সন্তান ফিরে পেতে পারেন অঞ্জলি।অঞ্জলিকে মেনে নিবেন না স্বামী কার্তিক ঠাকুর।তবে সমাজ মেনে নিলে তার আপত্তি নেই।এঘটনায় কার্তিক ঠাকুরের মোবাইলে আজ সকাল ৮:৫০ মিনিট পর্যন্ত ১ ঘন্টা ৬ মিনিট ২২ সেকেন্ডের কথা হয়।
তিনি ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্রাহ্মণ সমাজের কাছে বিচারের ভার দেন।ব্রাহ্মণ সমাজের উপজেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ হিসাবিয়া আলোবাবু বলেন,আগে হিন্দু নেতাদের সাথে কথা বলতে হবে,পবিত্র গ্রন্থ বেদ দেখতে হবে,তারপর সিদ্ধান্ত।তবে সরকার বা প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেন তাহলে তার সহযোগীতা থাকবে বলে মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদ সভাপতি অনুপ কুমার রায় লিটন বলেন,সমস্যাটা স্বামী ও স্ত্রীর।মাঝখানে কিছু লোক অগত্যা বাড়াবাড়ি করেছেন।
মন্দিরের সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায় ন্যায্য কথা বলেন বলে অনেকে সহ্য করতে পারেনা।প্রেম বা পরকীয়া যদি থাকে তাহলে অঞ্জলি তো বিষ্ণু’র ঘরে উঠতে পারত।ঘটনাটি তদন্ত করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজচ্যুত এক ঘরে থাকা অঞ্জলিকে ও তার মেয়েকে নিজ গৃহে ফিরিয়ে দেওয়া হোক এমনটাই দাবি সচেতন মহলের।
শেরার করুন..
লালমনিরহাটে নেতাদের চাপে বাধ্য হয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বিপাকে অঞ্জলিঃআশ্রয় মন্দিরে
সমাজচ্যুতঅঞ্জলি একঘরে বন্দীঃদায় এড়াতে পারেনা সমাজ।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া সরকারের হাট সেনপাড়া এলাকার ঘটনা।ঘটনাটি বড়ই বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। সংখ্যালঘু এক পরিবারে দাম্পত্য জীবনের কলহে ৩০ বছরের সংসার জীবনে আগুন জ্বলছে।
স্ত্রী’র পরকীয়া সন্দেহ ও অবিশ্বাসের কারণে সংসারে কয়েক বছর ধরে বনিবনা নেই।পরকীয়া’র অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২১ মে স্ত্রী অঞ্জলিকে মারধর করেন তার স্বামী ব্রাহ্মণ ঠাকুর কার্তিক চক্রবর্তী।মারধর সহ্য করতে না পেরে এক কাপড়ে ঘর ছাড়েন অঞ্জলি।এসময় উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ুয়া তৃতীয় মেয়ে শিখা চক্রবর্তী’ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান তার মায়ের সাথে।নিরুপায় অসহায় অঞ্জলি ও তার যুবতী কন্যা আশ্রয় নেন সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় নামে বাড়ির পাশের মন্দিরও আশ্রমে।আরও দুই মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া দোলন, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া জয়া ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া সম্পদ নামে এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
দ্বিতীয় মেয়ে রুমি চক্রবর্তী’ মারা গেছে।বড় মেয়ে সুমী’র বিয়ে হয়েছে।সুমী’র ঘরে নাতী নাতনী’রও জন্ম হয়েছে।
৪৫ বছর বয়স্কা নারী অঞ্জলিকে জড়িয়ে এমন অভিযোগে লজ্জিত পরিবারটি।যারফলে
উপজেলার বড় বড় হিন্দু নেতাদের কাছে বিচার প্রার্থী হোন কার্তিক চক্রবর্তী।হিন্দু নেতারা খবর পেয়ে সেই আশ্রম মন্দিরে ও কার্তিক ঠাকুরের বাড়িতে ছুটে যান।
স্বামী -স্ত্রীকে এককরার উদ্যোগ নিয়ে কয়েক দফায় ব্যর্থ হয়ে হিন্দু নেতারা অঞ্জলিকে মাত্র দু’দিন সময় বেঁধে দিয়ে বলেন,আগামী দু’দিনের মধ্যে স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে হবে নয়তো স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হবে।চার মেয়ে এক ছেলে মিলে সুখের সংসারটি যেন নিমিষেই তছনছ হয়ে গেছে।অভিমানী অঞ্জলি চাপের মুখে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হোন। লালমনিরহাট আদালতের মাধ্যমে ডিভোর্স এর কাজটি করে দেন আদিতমারী উপজেলার বাসিন্দা এডভোকেট মধু।তিনিও হিন্দু বলে তাঁর কাছে পরামর্শ ও আইনী সাহায্য নেন অঞ্জলি। হিন্দু ধর্মে স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার বিধান নেই বলে স্বামী ঠাকুর পুরোহিত ব্রাহ্মণ কার্তিক চক্রবর্তী’র দাবী।
ডিভোর্স দেয়ার পর থেকে সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় আশ্রমে দিন রাত এক রকম বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন অঞ্জলি ও সঙ্গে থাকা যুবতী মেয়ে শিখা।
আশপাশের পুরো হিন্দু সমাজ এক হয়েছেন,তাদেরকে এক ঘরে করেছেন।তাদের সাথে কথা বলা যাবেনা,কোন কিছু আদান- প্রদান করা যাবে না মর্মে হিন্দু নেতারা হুশিয়ারী উচ্চারণ করে গেছেন।মা ও মেয়ের জীবন বাঁচাতে মন্দিরের জমিদাতা মৃত হরিকান্ত সেনের ছেলে কমল সেন ও সরকারের হাট এলাকার মৃত খিয় নাথ রায়ের ছেলে মন্দির কমিটির সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায় সাহায্য করছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় ও আশ্রম মন্দির কমিটির সভাপতি,উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক,
জোংড়া মমিনপুর বাঁশ কাটা ১১৯ নং ছিটমহল হাই স্কুলের কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক,জোংড়া হিন্দু ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক বিষ্ণু প্রসাদ রায় হচ্ছেন কার্তিক -দম্পতির সংসার ভাঙ্গার মূল কারণ।
ঠাকুর কার্তিক পরিবারের অভিযোগ বারবার নিষেধ করার পরও বিষ্ণু প্রসাদ তার বাড়িতে আসেন।রাতবিরাতে অঞ্জলি’র সাথে গল্প করেন।
এতে প্রতিবেশীরা সমালোচনা করেন।পরকীয়া সন্দেহ করে প্রায় সময় স্বামী -স্ত্রী ঝগড়া হয়।
রহস্য কি তা উৎঘাটন করতে সরেজমিন এ প্রতিনিধি সৎসঙ্গ প্রার্থনালয়ে গেলে দেখা ও কথা হয় অঞ্জলি ও তার কন্যা শিখা চক্রবর্তী’র সাথে।
কীর্তনগান সুবক্তা অঞ্জলি চক্রবর্তী’র বক্তব্য বাকী জীবনটা পূজা প্রার্থনা করে বেঁচে থাকতে চাই। স্বামীর সংসারে অনেক নির্যাতন সয়েছি।আর না।
৩০ বছরের সংসার জীবনে প্রায়দিন অশান্তির সৃষ্টি। স্বামী ব্রাহ্মণ ঠাকুরের হাতে মারধর আর সহ্য হয়না।একদিন রড তালা দিয়েও বেদম মারপিট করা হয়।কোমরের নীচে ও উরুতে রক্তপাত হয়।তবু কাউকে বিচার দেননি অঞ্জলি।ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করার কথা।বাপের বাড়ি রংপুর দাসপাড়া।বাবা জগেশ্বর ভট্টাচার্য মা নিহার বালা পরলোক গমন করেছেন।
অঞ্জলি’র তিন ভাই আছেন।এক ভাই ধিমান ভট্টাচার্য রংপুর শহরের বড় একজন হিন্দু নেতা।স্বামীর নির্যাতনের কথা কখনও ভাইদের জানাননি কারণ বাবার উপদেশ ছিল স্বামীর বাড়ির কথা বাবার বাড়িতে বলতে নেই।এতে অমঙ্গল হয়।
বছর দশেক আগে বৃদ্ধ বাবার সামনে অঞ্জলিকে লাঠি দিয়ে মারধর নির্যাতন করেন স্বামী।সে দিনটার কথা ভুলতে পারেন না তিনি।সংসার জীবনে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।বাচ্চাগুলোর কারণে পাশের মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন।সংসার না করলেও স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার ইচ্ছা ছিল না তার।বাধ্য হয়ে দেন।
তাকে জড়িয়ে তার স্বামী মিথ্যা বদনাম ছড়িয়েছেন,এখবরটা ভাইয়ের কাছেও গেছে বলে বাবার বাড়িতে যাননি।তার সাথে বিষ্ণু প্রসাদের প্রেম বা পরকীয়া নেই বলে দাবী করেন।
কার্তিক -অঞ্জলি দম্পতি সমাজের দশজনের সহযোগীতা নিয়ে বছরখানেক আগে নিজের অর্থায়নে বাড়ির পাশে মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। সেই মন্দিরে কার্তিক ঠাকুর ৭৬ হাজার ৫ শ টাকা দান করেন।স্ত্রী অঞ্জলিও গরু বেচে ৪২ হাজার টাকা দান করেছেন।সৎসঙ্গ প্রার্থনালয় নামে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করার পর শুরু হয় সাংসারিক কলহ।ইতোমধ্যে মন্দিরটির ছাদ ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে।এদিকে,ঠাকুরের সংসারে আগুন ধরেছে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র সৎ সঙ্গ প্রার্থনালয় ও আশ্রমের নিয়মের কথা বলে জমিদাতা কমল সেনদের কাছ থেকে চালাকি করে মন্দিরের জমি নিজ নামে দলিল করে নেন মন্দির সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায়।
কেন,জমি নিজ নামে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে বিষ্ণু প্রসাদ রায় বলেন,কমল সেনরা সেচ্ছায় তার নামে মন্দিরের জমি দান করে দিয়েছেন।
প্রয়োজনে আরও দিবেন।প্রার্থনালয় ও আশ্রম করতে আরও জমি লাগবে।ইতোমধ্যে ৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করে ছাদ ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে।
কার্তিক ঠাকুর বলেন,বিষ্ণু একটা বাজে লোক।তার খপ্পরে পরেছে আমার স্ত্রী।
স্ত্রীকে অপহরণ করার অপরাধে স্বামী কার্তিক জুনের প্রথম সপ্তাহে পাটগ্রাম থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।এসআই মিন্টু চন্দ্র রায় ঘটনার তদন্তে গিয়ে আসামী বিষ্ণু প্রসাদ রায়,কমল চন্দ্র সেন,সতীষ চন্দ্র সেন,রাজেন্দ্র রায় সেন,রুপম রায় সেন কে জিজ্ঞাসাবাদের পর তেমন সত্যতা পাননি।
কার্তিকের স্ত্রী অঞ্জলি ও রংপুর রেডিও সেন্টারের রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মেয়ে শিখা অভিযোগটি নাকচ করে দেন।
এদিকে,মেয়ে শিখা কে মায়ের কাছ থেকে উদ্ধার করার জন্য লালমনিরহাট বিজ্ঞ আদালতে ১০০ ধারা একটি মামলা করেছেন বাবা কার্তিক।মেয়ে তার মায়ের কাছে থাকতে চাইলে তাকে তেজ্য ঘোষণা করবেন বাবা এমনটাই জানিয়েছেন মোবাইলে।
ঘটনাটি মীমাংসার জন্য অনেক চেস্টা করেছেন বলে জানান পাটগ্রাম থানার এস আই মিন্টু চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন,হিন্দু নেতারা বসে স্বামী -স্ত্রীকে এক করে দিলে থানা প্রশাসন সহযোগীতা করবে।এ ব্যাপারে পাটের ডাঙ্গা মন্দির নেতা বিনয়,নির্মল, বীরবল ও বাউরার দুলালসহ বেশ ক’জন ব্রাহ্মণের কারণে ডিভোর্স করা হয়েছে। উপজেলার ব্রাহ্মণ সভাপতি বিশ্বজিৎ রায় হিসাবিয়া আলো বাবু একটু নরম হলে বিষয়টা মানবিক ভাবে বিচার করলে স্বামী সন্তান ফিরে পেতে পারেন অঞ্জলি।অঞ্জলিকে মেনে নিবেন না স্বামী কার্তিক ঠাকুর।তবে সমাজ মেনে নিলে তার আপত্তি নেই।এঘটনায় কার্তিক ঠাকুরের মোবাইলে আজ সকাল ৮:৫০ মিনিট পর্যন্ত ১ ঘন্টা ৬ মিনিট ২২ সেকেন্ডের কথা হয়।
তিনি ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্রাহ্মণ সমাজের কাছে বিচারের ভার দেন।ব্রাহ্মণ সমাজের উপজেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ হিসাবিয়া আলোবাবু বলেন,আগে হিন্দু নেতাদের সাথে কথা বলতে হবে,পবিত্র গ্রন্থ বেদ দেখতে হবে,তারপর সিদ্ধান্ত।তবে সরকার বা প্রশাসন যদি ব্যবস্থা নেন তাহলে তার সহযোগীতা থাকবে বলে মন্তব্য করেন।
এব্যাপারে পাটগ্রাম উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ছাত্র ঐক্য পরিষদ সভাপতি অনুপ কুমার রায় লিটন বলেন,সমস্যাটা স্বামী ও স্ত্রীর।মাঝখানে কিছু লোক অগত্যা বাড়াবাড়ি করেছেন।
মন্দিরের সভাপতি বিষ্ণু প্রসাদ রায় ন্যায্য কথা বলেন বলে অনেকে সহ্য করতে পারেনা।প্রেম বা পরকীয়া যদি থাকে তাহলে অঞ্জলি তো বিষ্ণু’র ঘরে উঠতে পারত।ঘটনাটি তদন্ত করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজচ্যুত এক ঘরে থাকা অঞ্জলিকে ও তার মেয়েকে নিজ গৃহে ফিরিয়ে দেওয়া হোক এমনটাই দাবি সচেতন মহলের।
শেরার করুন..
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷