আগামীকাল বুধবার করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
সনাতন নিউজ২৪.<> ঢাকা বাংলাদেশ
আগামীকাল বুধবার করোনার টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দিয়ে আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।
এরপর আরো ২৪ জনকে টিকা দেওয়া হবে। পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে আরো ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। আর সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
টিকা নিতে আগ্রহীদের ‘সুরক্ষা’ প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে (www.surokkha.gov.bd) গিয়ে অথবা মোবাইল ফোনে অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করা ছাড়া কেউ টিকা পাবেন না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন অনলাইন রেজিস্ট্রেশন বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক এবং স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তারা টিকা বিষয়ে বক্তব্য দেন।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিক নিবন্ধনের জন্য কাজ শুরু হতে পারে। প্রথমে শুধু তালিকাভুক্ত সম্মুখসারির লোকজনই নিবন্ধন করবেন। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যরা নিবন্ধন করতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে জুনাইদ আহেমদ পলক ডিজিটাল ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’য় রেজিস্ট্রেশনের বিভিন্ন কারিগরি দিক সম্পর্কে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রগ্রামারদের নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় কভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ সফটওয়্যারটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
পলক বলেন, ‘আগামী বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ঠিক সেই সময়ই আমরা প্রস্তাব দিয়েছি যে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজিস্ট্রেশনটাও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। তাহলে যেটা হবে তখন এটা উন্মুক্ত হবে। তার আগ পর্যন্ত কিন্তু এই www.surokkha.gov.bd সেটাও রেজিস্ট্রেশনের জন্য উন্মুক্ত নয়, অ্যানড্রয়েড অ্যাপও না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনও তৈরি করে রাখছি। যদি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আমাদের নির্দেশ দেয় তাহলে আমরা এটা উন্মুক্ত করে দেব।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের বাইরে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়াকে আমরা নিরুৎসাহিত করছি। আমাদের এই ডাটাগুলো সংরক্ষণ করতে হবে, অ্যানালিসিস করতে হবে। অনলাইনের এই তথ্যগুলো পরবর্তীতে অনেকগুলো কাজে আমাদের লাগাতে হবে।’
কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকা দেওয়ার সুযোগ থাকছে না জানিয়ে ডা. খুরশীদ আলম বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী আমরা কেন্দ্রে টিকা পাঠাব। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র পরিবর্তন করে টিকার সুযোগ দিলে অনেক টিকা নষ্ট হবে।’ তিনি নির্ধারিত তারিখ ও কেন্দ্র অনুযায়ী করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণের জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তিনি কভিড ভ্যাকসিন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ‘সুরক্ষা’ ডেভেলপের সঙ্গে জড়িতদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এটা একটা যুগান্তকারী কাজ। ভারতের বাইরে সবচেয়ে স্বল্পমূল্যে বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাচ্ছে।’ব্রিফিং সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক বলেন, ‘সুরক্ষা’ সফটওয়্যারটি সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় ছাড়া প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এটি ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সরবরাহ করা হচ্ছে। নাগরিক নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন প্রদানসহ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সুরক্ষা সফটওয়্যারটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ব্যবহার করতে পারবে। ওই সিস্টেমের উন্নয়ন এবং পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), এটুআই এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একসঙ্গে কাজ করছে।
‘সুরক্ষা’র প্রধান বৈশিষ্ট্য
১. সেলফ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন ও ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোডের ব্যবস্থা রয়েছে।
২. ভ্যাকসিন গ্রহণ ও ভ্যাকসিন প্রদানের তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে যাচাই ও মনিটর করা যাবে।
৩. ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ সম্পন্ন হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুরক্ষা সিস্টেম থেকে অনলাইনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।
৪. জাতীয় পরিচয়পত্রের গেটওয়ে ‘পরিচয়’-এর মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হবে।
৫. নিরাপদ নিবন্ধন নিশ্চিতকল্পে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে ওটিপি বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড প্রেরণের ব্যবস্থা রয়েছে।
৬. এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন প্রদানের তারিখ ও তথ্য প্রদান করা যাবে।
৭. নাগরিকের ভ্যাকসিন ডোজ গ্রহণ সম্পর্কিত তথ্য QR code scan-এর মাধ্যমে নেওয়া এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
৮. ভ্যাকসিন প্রদান সম্পর্কিত বিভিন্ন তালিকা, পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন প্রস্তুতের ব্যবস্থা আছে। ৯. জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।
"নিবন্ধন করবেন যেভাবে"
ক. প্রথমে www.surokkha.gov.bd ওয়েব পোর্টালে প্রবেশ করতে হবে। খ. ‘নিবন্ধন’ বাটনে ক্লিক করে নাগরিক শ্রেণি সিলেক্ট করে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্ম তারিখ দিতে হবে। এরপর যাচাই বাটনে ক্লিক করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে। পরিচয় যথাযথ হলে বাংলা ও ইংরেজিতে নাম ফরমে দেখা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে কি না ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ সিলেক্ট করতে হবে। গ. নিবন্ধনকারী নাগরিকের পেশা এবং সরাসরি কভিড-১৯ কাজের সঙ্গে জড়িত কি না তা নির্বাচন করতে হবে। ঘ. যে মোবাইলে ভ্যাকসিনের তথ্য ও ভেরিফিকেশন এসএমএস পেতে চান তার নম্বর নিবন্ধনের সময় দিতে হবে। ঙ. ফরমে বর্তমান ঠিকানা ও টিকাকেন্দ্র নির্বাচন করতে হবে। চ. সব শেষে মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপি দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। ছ. নিবন্ধন সম্পন্ন হয়ে গেলে ‘টিকা কার্ড সংগ্রহ’ বাটনে ক্লিক করে কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। জ. নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে নির্ধারিত সময়ে এমএমএসের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের তারিখ ও কেন্দ্র জানানো হবে। ঞ. টিকাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রিন্টেড টিকা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে নিতে হবে।
শেরার করুণ...
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷