হিন্দুদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও বহিস্কৃত ছাত্রদের আদেশ প্রত্যাহারের দাবীতে হিন্দু মহাজোটের
সনাতন নিউজ২৪. <> ঢাকা বাংলাদেশ
কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে হিন্দুদের বাড়ীঘরে হামলা লুঠপাট ও অগ্নি সংযোগ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিন্দু ছাত্রদের বহিস্কারের প্রতিবাদে অদ্য ৬ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ১০.৩০ টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাব সহ সারা দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচীর পালন করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডঃ দ্বীনবন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বরিষ্ট সহ সভাপতি প্রদীপ পাল, মহাসচিব অ্যাডঃ গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, যুগ্ম মহাসচিব সুজন দে, অ্যাডঃ লাকি বাছার সাংগঠণিক সম্পাদক অ্যাডঃ সুজয় ভট্টাচার্য, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডঃ প্রতীভা বাকচী, প্রকাশনা সাগরিকা মন্ডল, যুব বিষয়ক সম্পাদক কিশোর বর্মন, ঢাকা জেলা সভাপতি অ্যাডঃ উজ্জ্বল মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক গোপাল পাল, হিন্দু মহিলা মহাজোটের সহ সভাপতি কাকলী নাগ, সাধারণ সম্পাদক মুক্তা বিশ্বাস, হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোটের সভাপতি সঞ্জয় শীল, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘোষ, সাংগঠণিক সম্পাদক তুলন পাল, ঢাকা মহানগর দক্ষিন এর সভাপতি ডি.কে সমির, নির্বাহী সভাপতি অখিল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল ঘোষ, সাংগঠণিক সম্পাদক নিপুন পাল, হিন্দু যুব মহাজোটের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রদীপ শঙ্কর, গৌতম সরকার অপু, প্রশান্ত হালদার, ছাত্র মহাজোটের সভাপতি সাজেন কৃষ্ণ বল, সিনিয়র সহ সভাপতি বাবুল কর্মকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ হালদার, সহ প্রচার সম্পাদক সুমন কুমার রায়, কল্যাণ মন্ডল, রণি রাজবংশী প্রমূখ।
বক্তাগণ বলেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গারা বাজার এলাকার জনৈক ফ্রান্স প্রবাসীর ফেসবুক আইডিতে ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের কার্যক্রমকে প্রশংসা করে লেখা একটি পোষ্টকে ইসলাম ও নবীর অপমান প্রচার করে গত ৩১/১০/২০২০ ইং তারিখ বিকাল ৩ টায় শত শত সন্ত্রাসী ইউপি চেয়ারম্যান বনজ কুমার শিব ও শিক্ষক শঙ্কর দেবনাথের বাড়ী সহ ৭টি বাড়ী ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর ও ব্যাপক লুঠপাঠ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হিন্দু মহাজোটের একটি টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে ভিকটিমদের কাছ থেকে বর্ণনা শুনে ঘটনার ভয়াবহতায় বাকরুদ্ধ ও হতভম্ব হয়ে পরেন। ঘটনার সময় ভয়ে মহিলারা হাতের শাঁখা খুলে সিন্দুর মুছে অন্যত্র আশ্রয় নেয়। শিশুরা আতঙ্কে বমি করতে শুরু করে। সন্ত্রাসীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে মহিলাদের শ্লীলতাহানী করে। স্বর্ণালঙ্কার সহ বহু মূল্যবান জিনিস লুঠ হয়। ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় ৩ কোটি টাকা। পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার না করে উল্টো ভিকটিমদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে জেল হাজতে প্রেরন করে।
বক্তাগণ বলেন করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়ার পর দেশে হিন্দু নির্যাতন ব্যপকভাবে বেড়ে যায়। জুলাই আগষ্ট সেপ্টেম্বর তুলনামূলক কম থাকার পর অক্টোবর থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকে। ফেসবুকে মিথ্য নবী ও ইসলামের অবমাননার অযুহাতে ফেনীর মিঠুন দে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মিঠুন মন্ডল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিথি সরকার (পুলিশ ফোন করে থানায় ডেকে নেয়, তারপর থেকে সে নিখোঁজ), নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দীপ্ত পালও প্রতীক মজুমদার, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র সুদীপ্ত মন্ডল মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার, নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বিপ্লব চন্দ্র দাস ও ফুলক চন্দ্র দাস ও পার্বতীপুর সরকারী কলেজের ছাত্র দীপ্তি রাণী দাসকে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অযুহাতে বহিস্কার ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা শেখর রঞ্জন সিংহ সহ তিনটি পরিবাবের কয়েকজনকে হামলা করে আহত করা হয়েছে। হত্যার হুমকীতে প্রানের ভয়ে তারা বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রাজাপুর গ্রামে জয়দেব কুরি সহ ৮/৯ জনকে কুপিয়ে আহত করে। রংপুর জেলার নাগেশ্বরীতে স্কুলের হাট এলাকায় হিন্দু বাড়ীঘর ভাংচুর, মন্দির প্রতিমা ভাংচুর ও কয়েকজনকে রক্তাক্ত জখম করে। চট্টগ্রামের হাট হাজারী থানার যুগিরহাট জমি দখল করতে রতন নাথ মুক্তা নাথকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে রক্তাক্ত জখম করে। জয়পুর হাট শহরের বামন পাড়ায় দূর্গা প্রতিমা ভাংচুর। পালপাড়া সুব্রত দাস নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা। গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও মার্টিন জয় বারিকদারের সম্পত্তি দখল হয়েছে। সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ায় নগর কীর্তনরত নারী পুরুষের উপর হামলা করে কয়েকজনকে আহত করে। ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার বাঞ্চারামপুরের দরিকান্দি গ্রামে বিজয় দারে বাড়ীতে হামলা হয়েছে।
এছাড়াও ধামরাই বাড়ীগাঁও সহ সারা দেশেই নিরব অত্যাচার, দেশত্যাগের হুমকী, জমি দখলের হুমকী, নারী অপহরনে অতিষ্ট হিন্দু সম্প্রদায়। দেশের সর্বত্রই হিন্দু সম্প্রদায় আতঙ্কে দিন যাপন করছে। সরকার মৌলবাদীদের প্রশ্রয় দিয়ে হিন্দুদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করে দেশকে হিন্দু শুন্য করে ইসলামী রাষ্ট্র করতে চায়। যে কারনে গত ১৫ বছরে হিন্দু নির্যাতনের কারনে কাউকে শাস্তিবিধান করা হয় নাই। ইতোপূর্বে চট্টগ্রামের রাউজান ফটিকছড়িতে লোকনাথ মন্দির সহ ১১টি মন্দির পুড়ানোর ঘটনায় সারা পৃথিবী জুড়ে হৈ চৈ হলেও পুলিশ সে ঘটনায় ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে সকল আসামীকে খালাশ দিয়েছে। যে কারনে একের পর এক ঘটনা ঘটছে। সরকার মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে সমস্ত পাঠ্যপুস্তক ইসলামিকরণ করেছে। এত কিছুর পরও জাতীয় সংসদ নিরব ভূমিকা পালন করছে। সেকারনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে জাতীয় সংসদে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যাবস্থা পূন প্রতিষ্ঠা ও সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রনালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷