Breaking News

সংখ্যালঘুদের কুপিয়ে পিটিয়ে জায়গা দখলের চেষ্টা চেয়ারম্যানের, মামলা নিচ্ছে না কর্ণফুলী থানা পুলিশ


সনাতন নিউজ২৪.  
যেন বাংলা সিনেমার কোন গল্প! আর ওই গল্পের ভিলেন আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার দলবল। সিনেমার গল্পকে বাস্তবেই রূপ দিয়েই তারা জমি দখল করতে সংখ্যালঘুদের উপর ২ দফা হামলা চালিয়েছে।
শুধু তাই নয়, আপোষের নামে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে রুমে তালা লাগিয়ে বেপরোয়া পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে তারা স্থানীয়দের। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। চেয়ারম্যানের সশস্ত্র দলবলের এ হামলায় আহত হয়েছে দুই পুলিশ সদস্য। স্থানীয়দের উপর নির্বিচারে এ হামলার ঘটনায় মামলাও নিচ্ছে না কর্ণফুলী থানা পুলিশ।
চেয়ারম্যানের লোকজনের হামলায় আহতদের মধ্যে ১৯ জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, স্থানীয় সিংহপাড়ার প্রমিলা সিংহ, প্রতিমা সিংহ, চন্দ্রমোহন সিংহ, শিব সিংহ, মাইকেল দেব বর্মণ, প্রভাষ সিংহ, রাম চন্দ্র দাশ চন্দন, উৎপল সিংহ, সুসন সিংহ, সুজন সিংহ, বলরাম, ঝরণা, জনি, মৃদুল, কবিতা, হারাদন, তিলক, চন্দ্র মোহন, মীরা সিংহ।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, কর্ণফুলী থানার ওসি বলেছেন ভূমিমন্ত্রী নির্দেশ ছাড়া কোন মামলা নেওয়া যাবে না। মন্ত্রী মহোদয় ফোনে বলেছেন, ওনার বাসায় গিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে। ওসির নির্দেশনা পেয়ে ভূমিমন্ত্রীর চট্টগ্রাম নগরীর সার্সন রোডের বাসায় দুপুর ২ টা ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা বসে থেকে ভুক্তভোগীদের কেউ মন্ত্রীর দেখা পাননি।
এ সময় মন্ত্রীর বাসার লোকজন ভুক্তভোগীদের বলেন, ‘আপনারা থানায় চলে যান। মন্ত্রী যা বলার ওসিকে বলে দিয়েছেন।’
এমন রক্তাক্তের ঘটনার পরও মামলা নিতে থানা পুলিশের গড়িমসির নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা।
সংগঠনটির দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সংখ্যালঘু পরিবার ৩২ শতক জায়গা ইউনিয়ন পরিষদকে দান করেছে। ওই জায়গাটি ৪২ শতকের। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মান ৩২ শতকের সঙ্গে অবশিষ্ট ১০ শতকও নিজের দখলে নিয়ে মার্কেট নির্মাণের পাঁয়তারা করছে দীর্ঘদিন ধরে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগেও আনোয়ারা সংখ্যালঘু পরিবার ও মন্দিরে হামলার ঘটনার কোন বিচার হয়নি। শেষমেশ সম্পত্তি উদ্ধারের করেই আড়াল করে দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিচার। বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠী ও স্থানীয় প্রশাসন হামলাকারীদের পক্ষে থাকায় এসব ঘটনার সুষ্ঠু কোন বিচার হয়নি অতীতেও। একজন মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকায় এভাবেই একের পর এক সংখ্যালঘুদের হামলা করে জায়গা দখলের ঘটনাকে কোনভাবেই ভাল দৃষ্টিতে দেখছেন না কেউ।’
জানা যায়, আনোয়ার উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের বন্দর গ্রামে বসবাস করে সংখ্যালঘু ২৫ পরিবার। শুক্রবার (১৫ মে) সকাল ৯ টায় তাদের পৈতৃক সম্পত্তি দখলে আসে বৈরাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোলায়মানের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জনের একটি দল। এদের সবার হাতে ছিল দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ লাঠিসোঁটা। জমির মালিকরা তাদের পৈতৃক জায়গা দখলে বাঁধা দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায় সংখ্যালঘুদের ওপর। ঘটনাস্থলে আহত হয় সংখ্যালঘু পরিবারের ১১ সদস্য। এদের মধ্যে প্রমিলা সিংহ ও প্রবাস সিংহের অবস্থা আশংকাজনক। আহতদের আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও আশংকাজনক ৩ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গায় মালিক ও উক্ত ঘটনায় আহত সুসেন সিংহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্দর গ্রামে আমাদের ২১ গন্ডা জায়গার মধ্যে ১৬ গন্ডা জায়গা ইউনিয়ন পরিষদের নামে দান করে দেয় আমাদের পূর্বপুরুষরা। আর ৫ গন্ডা জায়গায় সীমানা বাইরে ছিলো। এখনও পর্যন্ত কোন চেয়ারম্যান এই ৫ গন্ডা জায়গা দাবি করেননি। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান আমাদের জায়গাটা দখল করার জন্য উঠেপড়ে লাগে।’
আহত সুসেন সিংহ আরও বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের সীমানা দেয়াল দেয়ার নাম করে তারা এই জায়গা দখলে নিতে চাইলে আমরা বাধা দিই। এ সময় চেয়ারম্যান আমাদের উপর হামলার নির্দেশ দেয়। সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার পর ফাঁড়ির এসআই পারভেজসহ আরেকজন পুলিশ সদস্য এসে আপোষের কথা বলে। চেয়ারম্যানের নির্দেশেই আমাদের পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে তার দলবল আবারও আমাদের উপর হামলা চালায়। এসময় এসআই পারভেজ বাঁধা দিতে চাইলে তাকেও কিল-ঘুষি মারতে থাকে এরা। পরে থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদেরকে উদ্ধার করে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। তারমধ্যে দু’জনের অবস্থা খুব খারাপ। তাদের একজন পমিলা (৬০) আরেকজন প্রবাস সিংহ (৪৫)। প্রবাসের এখনও জ্ঞান ফিরেনি। এত লোককে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনায় কর্ণফুলী থানার ওসি মামলা নেয়নি। ওসি জানিয়েছেন, মন্ত্রী সাহেব নাকি মামলা নিতে মানা করেছেন। আমাদেরকে মন্ত্রী সাহেব ডেকেছে আমরা সেখানে যাচ্ছি।’
এদিকে ভূমিমন্ত্রীর বাসায় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিদের ডাকা হলেও সেখানে গিয়ে মন্ত্রীর দেখা পাননি বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, ‘আমাদের ওসি বলেছেন মন্ত্রী মহোদয় ডেকেছেন। আমরা তাই ওনার শহরের সার্সন রোডের বাসায় গেলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে এক ঘণ্টা বসে থাকার পর জানানো হল, মন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে যা বলার ওসিকে বলে দিয়েছেন। আপনারা থানার ওসির কাছে চলে যান।’
কর্ণফুলী থানার বন্দর পুলিশ ফাঁড়ি এএসআই (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ পারভেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগে হামলায় অনেকে আহত হন। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউনিয়ন পরিষদের দু’পক্ষের সাথে বসি। সেখানে একপর্যায়ে আবারও এলোপাতাড়ি আক্রমণ শুরু হয়। এতে আমি, পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিনসহ তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হই। আমরা এখন মেডিকেল চিকিৎসা নিচ্ছি।’
বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সোলায়মান বলেন, ‘এসব জায়গা হিন্দুরা ইউনিয়ন পরিষদকে দান করেছে। এটির সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে বাঁধা দিলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’ করোনার এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতি ও লকডাউনের সময় ঝুঁকিতে কেন সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. সোলায়মান বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ কোথাও বন্ধ নেই। সীমানা প্রাচীর নির্মাণে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি ছিল।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনার এমন মহামারীতে অনুমতির বিষয়টি হাস্যকর। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কিংবা জায়গা জটিলতার কোন কিছু আমি জানতাম না। ইউনিয়ন পরিষদকে আমি কোন নির্মাণ কাজ পরিচালনা করতে বলিনি।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ওসি মো. ইসমাইল হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তেমন কোন ঘটনা হয়নি। তবে ঘটনায় যদি কেউ আহত হয়ে থাকে, তদন্তের পর মামলার বিষয়টি দেখা যাবে।’ তিনি ভুক্তভোগীদের মন্ত্রী বাসায় যাওয়ার পরামর্শের বিষয়টি এড়িয়ে যান।
<<<<<<<<<<
খবরের সর্বস্বত্ব- চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কোন মন্তব্য নেই

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷