জমি জিহাদ, ধর্মস্থান ভাঙচুর, নারী অপহরণ : লকডাউনের সময়েও হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের পরিমাণ কমছে না
সনাতন নিউজ২৪.
ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশন অভিযোগ জানিয়েছে যে, তারা লক্ষ্য করেছে রমজান মাসেও বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বিন্দুমাত্র কমছে না। এমনকি যখন করোনা আতঙ্কের দরুন সেই ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে লকডাউন চাপানো হয়েছে, তখনও সেদেশের হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড হিন্দু ফেডারেশন অভিযোগ জানিয়েছে যে, বাংলাদেশে শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে ধর্মান্ধ মুসলিমরা হিন্দুদের ওপর অত্যাচার চালিয়েই চলছে। হিন্দু দোকানে লুটপাট থেকে শুরু করে, হিন্দু ব্যবসায়ীরা খুন করা থেকে বলপূর্বক হিন্দু জমি হাতানো থেকে মন্দির ভাঙ্গা, বিগ্রহ ভাঙ্গা এবং নারী অপহরণ ও ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে।
একটি বিবৃতিতে ফেডারেশন জানিয়েছে, “৩০ এপ্রিল নাগাদ ১২টা হিন্দু মালিকানাধীন দোকান লুট হয়েছে, ২ হিন্দু ব্যবসায়ী খুন হয়েছে, ৩০৭ একর হিন্দু জমি স্থানীয় মুসলিম গুণ্ডাদের হাতে চলে গিয়েছে, ২ মন্দির সম্পূর্ণ ভাবে ধূলিসাৎ হয়েছে, ২১ হিন্দু পরিবারকে ভিটেছাড়া করা হয়েছে এবং ১৪ হিন্দু পরিবারকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।”
ফেডারেশন আরও দাবি করেছে যে, শুধু এপ্রিল মাসের মধ্যেই ৪ হিন্দু মেয়ে অপহৃত হয়েছে, ৬ হিন্দু মেয়ে ধর্ষিত ও নিহত হয়েছে, আরও দশ হিন্দু মেয়েকে অপহরণ করে বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করা হয়েছে। বিরক্তির সুরে ফেডারেশন দাবি করেছে “বাংলাদেশে মনে হচ্ছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য মানব অধিকার বলে কোনও বস্তু বরাদ্দ রাখা হয়নি। বরং দিনকে দিন সেদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, এতকিছু ঘটে যাওয়ার পরেও কেউই গ্রেফতা হচ্ছে না।”
ফেডারেশন দাবি করেছে যে, দোষীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত সেদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের পরিমাণ মোটেও কমবে না।
অত্যাচারের কালপঞ্জি...
ফেডারেশন কালানুক্রমে এক এক করে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের বিবরণ দিয়েছে। সেগুলি নিচে দেওয়া হল :
৪ এপ্রিল : পাটুয়াখালি জেলার মাহিপুর থানার অন্তর্গত পুরাণ মাহিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নারায়ণ সরকারের জমি স্থানীয় নেতা বলপূর্বক অধিগ্রহণ করেছেন।
৬ এপ্রিল : যশোর জেলার চৌগাছা থানার বাসিন্দা প্রায় ৫০ হিন্দু পরিবারের মালিকানাধীন ১০০ বিঘা জমি আওয়ামী লিগের নেতারা দখল করে নিয়েছেন।
৭ এপ্রিল : পাটুয়াখালি খানার অন্তর্গত দশমিনা উপজেলায় স্থিত মন্দির ভাঙচুর চালানোর্য সেখানকার হিন্দুরা মহাতংকের মধ্যে বসবাস করছেন।
৮ এপ্রিল : পুলিস ইন্দ্রজিত হাজারি নামে একজন স্কুল শিক্ষককে নবীকে অপমান করে ফেসবুক পোষ্ট করার অজুহাতে গ্রেফতার করেছে।
মন্দির ও বিগ্রহ ভাঙ্গা হচ্ছে, হিন্দু জমিগুলো বেআইনি ভাবে হস্তান্তরিত হচ্ছে
৯ এপ্রিল : বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কুকি কালিদাস গ্রামে কয়েকজন মুসলিম দুষ্কৃতি একটি শিব মন্দিরে ঢুকে রাধাগোবিন্দ ও লক্ষ্মীর মূর্তি ভেঙ্গে সেখানকার হিন্দুদের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
১০ এপ্রিল : বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলার জনৈক জীবন মৃধার ৬ বিঘা জমি কেড়ে নিয়েছেন সেখানকার প্রভাবশালী আওয়ামী নেতা।
১১ এপ্রিল : জনৈক গুণ্ডা অসিত কুমার সরকারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা তোলা দায়ের চেষ্টা করে। ফরিদপুর জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার তিতুকান্দি গ্রামের বাসিন্দা অসিত কুমার সরকার তাতে রাজি না হলে উক্ত গুণ্ডা ৩০ জন সদস্য নিয়ে সরকারকে গুরুতর আহত করেন।
১২ এপ্রিল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার নাজিরপুর গ্রামের সুধাংশু দাসের বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রতিবেশী তিন লাখ টাকা লুটের পাশাপাশি তার বাড়ির মূল্যবান বৃক্ষাদি কেটে নেয়।
হিন্দু মহিলারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, অপহৃত হচ্ছে এবং বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছেন।
১৩ এপ্রিল : অসহায়া বিধবা বাসনা রাণী দাস ও তার কন্যাকে মারধর করে তাকে ভিটেছাড়া করে তারই মুসলিম প্রতিবেশীরা।
১৪ এপ্রিল : নড়াইল জেলার বাসিন্দা প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক দীপক কুমার রাহাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বলে ভীত সন্ত্রস্ত রাহা পরিবার এরপর দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
১৫ এপ্রিল : নীলফামারী জেলার দিমলা উপজেলার বাসিন্দা ধনেশ্বর রায়ের নাবালিকা কন্যা প্রতিমা রাণীকে তার বাড়ি থেকেই অপহরণ করে বলপূর্বক স্থানীয় মসজিদে একজন মুসলিমের সাথে বিবাহ দিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়।
১৬ এপ্রিল : বরিশাল জেলার অগৈলঝড়া থানার অন্তর্গত পশ্চিম সুজনকাঠি (মল্লিকপুর) গ্রামের একজন মুসলিম প্রতিবেশী সপরিবারে প্রতিবেশী হিন্দু পরিবারকে হামলা করে। এতে সাংঘাতিক আহত হয়ে অই হিন্দু পরিবারের চারজন সদস্য হাসপাতালে ভরতি হয়।
১৭ এপ্রিল : রাজশাহী জেলার বাসিন্দা নিমাই সরকারের কন্যা ১৪ বছরের বালিকা অষ্টমী সরকার নিয়মিত ভাবে মুসলিম প্রতিবেশীদের টিটকারির দরুন মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে।
হিন্দুরা নিয়মিত ভিটেছাড়া হয়েই চলছেন..
১৮ এপ্রিল : ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন অজুহাতে অত্যাচার চালানো সেদেশের পুলিসের নেশায় পরিণত হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে পরিতোষ কুমার সরকারের গ্রেফতারের কথা বলা যেতে পারে। কলেজ ছাত্র পরিতোষের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে অপমানজনক ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে।
১৯ এপ্রিল : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর এলাকার একজন মুসলিম ধর্মগুরুর শেষকৃত্য উপলক্ষে লক্ষাধিক মানুষের সমাগমের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করায় মধু কুণ্ডু নামে একজন হিন্দুকে করেছে বাগেরহাট এলাকার ফকিরহাট থানার পুলিস।
২১ এপ্রিল : সাতকানিয়া অঞ্চলে ৬০ জনের একটি গুণ্ডা বাহিনীর হাতে ৩০ হিন্দু পরিবারের লোক গুরুতরভাবে জখম হয়েছে। ২৫ জন হিন্দু, যার মধ্যে ১১ নাবালক আছে, তারা হাসপাতালে ভরতি হয়ে আছে।
২২ এপ্রিল : জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর পুরসভা এলাকায় পার্বতী মন্দিরের সামনে জুয়া খেলায় বাধা দেওয়ায় মুসলিম গুণ্ডারা মন্দিরকে ভেঙ্গে একেবারে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে।
২৩ এপ্রিল : খুলনা জেলার ডাকোপ উপজিলার ২৩ বছরের হিন্দু যুবক সুব্রত মণ্ডলকে গলা কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে একদল গুণ্ডা।
অত্যাচার বেড়েই চলেছে..
২৪ এপ্রিল : বাগেরহাট জেলার মংলা অঞ্চলে একদল গুণ্ডা স্থানীয় আওয়ামী নেতার নির্দেশে হিন্দু পরিবারকে ভিটেছাড়া করার উদ্দেশ্যে প্রাণঘাতী হামলা চালায়। এতে ঐ পরিবারের ছয়জন সদস্য জখম হইয়ে হাসপাতালে ভরতি হয়য়, যার মধ্যে একজন গর্ভবতী নারীও ছিল।
২৫ এপ্রিল : বগুড়া জেলার শরিয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রবিদাসের বারি ও সন্নিহিত মন্দিরে ভাংচুর চালায় একদল গুন্ডা।
২৬ এপ্রিল : লক্ষ্মীপুর পুরসভায় দুই হিন্দু মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়।
২৭ এপ্রিল : নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নরেন্দ্র মোক্তারকে মারধর করে তার দুই মুসলিম প্রতিবেশী, উদ্দেশ্য ছিল তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া।
২৮ এপ্রিল : দিনাজপুর জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত ইশানিয়া ইউনিয়নের মহেশখালি বাজারের মধ্যে অবস্থিত একটি দূর্গা ও বনকালী মন্দির ভেঙ্গে চুরমার করে দেয় আওয়ামী নেতার মদতপুষ্ট গুণ্ডারা।
২৯ এপ্রিল : সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা বিকাশ চন্দ্র ঘোষের বাড়িতে ৪০ জনের গুণ্ডাদের একটা দল এসে হামলা চালায়। উদ্দেশ্য ছিল তার ছয় বিঘা জমি হাতানো।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷