[সংবাদ সম্মেলনে স্বামীর মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন যতন চন্দ্র সাহার স্ত্রী লাকি সাহা
৩০/১০/২০২১/শনিবার বিকালে মন্দির প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।
সম্প্রতি শেষ হওয়া দুর্গাপূজা চলাকালে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দেন।
এতে তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় কেউ ধর্ষিত হয়নি; একটি মন্দিরেও অগ্নিসংযোগ কিংবা ধ্বংস করা হয়নি। ধর্মীয় সহিংসতায় এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে চারজন মুসলমান। হিন্দুদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে তারা নিহত হন। দুজন হিন্দু মারা যান যাদের মধ্যে একজনের সাধারণ মৃত্যু হয়েছে। অন্যজন পানিতে ডুবে মারা গেছেন।
শুক্রবার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, টাইমস নাউ, হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতের প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করেছে। দেশেও কয়েকটি গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৫ অক্টোবর বেলা ২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীরা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে ১১টি মন্দির, পূজামণ্ডপসহ বেশ কয়েকটি দোকান ও ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।
দুষ্কৃতকারীরা বিজয়া সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের সদস্য যতন সাহাকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং ইসকনভক্ত প্রান্ত চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মেরে পুকুরে ফেলে দেয়, যার লাশ পরদিন সকালে ইসকন মন্দির-সংলগ্ন পুকুরে ভেসে ওঠে, যা ইতিমধ্যে গণমাধ্যম ঘটনার ভয়বহতা দেশবাসীকে অবহিত করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চৌমুহনী আসার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “আমরা মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়কে অনুরোধ করব আপনি চৌমুহনী এসে দেখে যান ঘটনার ভয়াবহতা। আর কী হলে আপনি স্বীকার করবেন মন্দিরে ভাঙচুর হয়েছে ও মানুষ খুন হয়েছে? আপনার বক্তব্য আমাদের ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়।
মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য সহযোগিতাসহ ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, ব্যক্তি তথা অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর; বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহযোগিতা করার এবং বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা আহ্বায়ক বিনয় কিশোর রায়।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ইসকনের অধ্যক্ষ রসপ্রিয় দাস অধিকারী, হামলার ঘটনায় নিহত যতন সাহার স্ত্রী লাকি সাহা, যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উত্তম দাস, বিজয়া দুর্গামন্দিরের সভাপতি তাপস সাহা প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে স্বামীর মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন যতন চন্দ্র সাহার স্ত্রী লাকি সাহা।
তিনি বলেন, “আমরা তো কোনো ধর্মকেই অসম্মান করি না। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। আমি না হয় আমার জীবন চালাব। কিন্তু আমার এই ছোট্ট ছেলেকে কীভাবে বলব, তার বাবার কী হয়েছে। আজকে যে তার বাবার শ্রাদ্ধ হয়েছে, সে তো বুঝতেই পারে কী হয়েছে। সে জানতে চায়, বাবা কখন আসবে। আমি ছেলেকে বলতেও পারব না - আমরা সবাই এক। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এই কথা আর কখনও আমার মুখ দিয়ে আসবে না।”
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে ১৩-১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর হাতিয়া, বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় হিন্দুদের মন্দির, পূজামণ্ডপ, দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলায় ইসকনভক্ত দুইজন নিহত হন।
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানায় ২৯টি মামলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২১২ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই
মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷